অসংখ্য জ্ঞানী-গুনীর পুণ্যস্মৃতি বিজড়িত দেবহাটা উপজেলা। এ উপজেলায় অনেক জ্ঞানী-গুনী ও প্রখ্যাত ব্যক্তি/মণিষীর জন্মস্থান। যারা তাদের কৃতকর্মের জন্য দেবহাটা বাসী তথা দেশবাসীর নিকট চিরঅমর হয়ে থাকবে। উপজেলার ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজ সংস্কারক, ধর্মীয় নেতা, ভূস্বামী, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি, লেখক-কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী হিসেবে যারা খ্যাতি অর্জন করেছেন এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন ব্যক্তিত্ব :
বাংলা ১২৪৯ সালে দেবহাটার কাজী মহল্লা গ্রামে প্রসদ্ধি কুতুব সৈয়দ হযরত আব্দুস ছোবহান (রহঃ) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তাঁর কর্মময় জীবন ইসলাম ধর্মের খেদমতে অতিবাহিত করেন। বাংলা ১৩৩৪ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। কাজী মহল্লা গ্রামে তাঁর মাজার অবস্থিত।
দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া গ্রামে ১৮৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রাল এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গণিত শাস্ত্রে এম.এ পাশ করেন। তিনি বৃটিশ ভারতীয় শিক্ষাবিভাগে যোগ দিয়ে স্কুল সমূহের বিভাগীয় পরিদর্শকের পদ লাভ করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি হোলকার মহারাজার ইন্দোর রাজ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি ১৯৩০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক হিসেবে তিনি পরিচিত। ১৮০০ সালের মধ্য ভাগে বর্তমান দেবহাটা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে বহেরা এ.টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বাংলা ১৩২৯ সালে ‘সুরতজান-কাশেম আলি দাতব্য চিকিৎসালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজ উন্নয়মূলক কাজের জন্য তিনি বৃটিশ সরকার কর্তৃক ‘খান’ উপাধিতে ভূষিত হন।
ফণীভূষণ মন্ডল দেবহাটায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজ এলাকার জমিদার (গাতিদার) ছিলেন এবং এলাকার অনেক সমাজ সেবামুলক কাজ করেছেন। তার জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে স্কুল প্রতিষ্ঠা, মাঠ ও বাগানের জন্য জমিদান ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৯৪১ সালের ০৯ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ভারতের চব্বিশ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ থানাধীন কালুতলা গ্রামে ১৮৯৮ সালে শরিয়াতুল্লাহ গ্রাজী জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৫২ সালে দেবহাটা থানার পারুলিয়া গ্রামে পরিবার পরিজনসহ স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আসেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত হন। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক এ কর্মবীর ১৩৬৭ সনের ১৯ বৈশাখ (১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ) পারুলিয়াতে ইন্তেকাল করেন।
বাংলা বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্যের বংশধর ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়ের পৈত্রিক নিবাস দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর গ্রামে ১৮৮২ সালে বিহারে পাটনায় তার জন্ম হয়। তার পিতার নাম প্রকাশ চন্দ্র রায়। বিধান চন্দ্র রায় লন্ডন থেকে এফ.আর.সি পাশ করে বিশিষ্ট চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সাথে সাথে তিনি একজন বাগ্মী ও রাজনৈতিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে তথা স্বাধীনতা সংগ্রামী ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায় ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আমৃত্যু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।
সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর গ্রামে ১৯৩৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মুন্সি খিজির মিস্ত্রী। ১৯৫৮ সালে কুষ্টিয়া কলেজ থেকে বি.কম পাশ করার পর মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান মুজাহিদ বাহিনীতে যোগদান করেন এবং ক্যাপ্টেন উপাধি লাব করেন। ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টর প্রতিষ্ঠা পূর্বক সার সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। ১৯৮৫ সালে দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সখিপুর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৩ সালে ২৩ জুলাই বেলা ১২:৩০ মিনিটে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
অনীল স্বর্ণকার এলাকার বিশিষ্ট ভূস্বামী ছিলেন। দেবহাটা উপজেলার দেবীশহর গ্রামে তাঁর জন্ম। তিনি ৬ থেকে ৭ হাজার বিঘা জমির মালিক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দেবীশহরে Agriculture and Fish Farming Co-operative Limitedপ্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির অধীনে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে আঁততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।
১৯৩৭ সালের ২০ জানুয়ারী ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নিয়ে আইনজীবি হিসেব কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও যোদ্ধা হিসেবে যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেবহাটা-কালিগঞ্জ নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালের ২৬ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS